শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:১০ পূর্বাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার, (সুনামগঞ্জ):
২৮-বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয় বাংলাদেশ (বিজিবি)-এর টহলদল কতৃক চোরাচালানের জব্দকৃত কয়লা পরিবহন করে বিওপিতে পৌছে দেয়ার জের ধরে এবার বিজিবির সামনেই চোরাচালানী চক্রের সদস্যরা হতদরিদ্র শ্রমিককে বেধরকভাবে পিঠিয়ে আহত করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
আহত শ্রমিকের নাম ইছাক মিয়া (৩২)। সে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার টেকেরঘাট সীমান্তের বড়ছড়া গ্রামের মৃত রুসমত আলীর ছেলে। রবিবার বিকেলে ব্যাটালিয়নের তাহিরপুরের টেকেরঘাট বিজিবি কোম্পানী সদর লাগোয়া এক মনোহারী দোকানের সামনেই এ মারধরের ঘটনা ঘটেছে। রবিবার সন্ধায় এলাকাবাসীর সহযোগীতায় আহত ওই হতদরিদ্র শ্রমিককে চিকিৎসার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
রবিবার বিকেলে উপজেলার টেকেরঘাট সীমান্তে ঘটনাস্থলে থাকা নানা শ্রেণিপেশার লোকজন ও আহত শ্রমিকের পরিবার গণমাধ্যমকে জানান, ভারত থেকে চোরাচালানের মাধ্যমে নিয়ে আসা একটি অবৈধ কয়লার চালান ২৮-বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন বাংলাদেশ (বিজিবি) সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের টেকেরঘাট কোম্পানী সদরের কোম্পানী কমান্ডার নায়েব সুবেদার আব্দুস সাক্তারের নেতৃত্বে বিজিবি টহল দল জব্দ করে শনিবার রাতে।
এরপর ওই কয়লা পরিবহনের জন্য উপজেলার বড়ছড়া সীমান্ত গ্রামের শ্রমিক ইছাককে ডেকে নেয় বিজিবি টহল দল। রাতেই অন্যান্য শ্রমিকদের সহযোগিতায় উপজেলার বড়ছড়া সীমান্ত গ্রামের জাহের আলী, তার শুক্কুর আলী, সোহেল মিয়া, রাসেল মিয়ার ডিপো থেকে মালিকবিহীন অবস্থায় প্রায় ১৫শ কেজি চোরাই কয়লা জব্দ করে বিজিবি।
বিজিবির অভিযানে মজুদকৃত কয়লার বিপরীতে এলসির বৈধ কাগজপত্র দেখাতে না পেরে কৌশলে শুক্কুর, সোহেল, রাসেল ও চোরাচালানী চক্রের সদস্যরা ডিপো ছেড়ে তাৎক্ষণিকভাবে পালিয়ে যায়। পরদিন রবিবার বিকেলে শ্রমিক ইছাক পরিবারের জন্য খাদ্য সামগ্রী কিনতে টেকেরঘাট কোম্পানী সদরের লাগোয়া একটি মনোহারী দোকানে গেলে শতশত লোকের সামনে এমনকি বিজিবি কোম্পানী সদরের প্রবেশ মুখের সামনের সড়কে বিজিবির সদস্যরা উপস্থিত থাকার পর দৃষ্টতা দেখাতে শুক্কুর, রাসেল দুই সহোদর বেধরকভাবে প্রথম দফায় হতদরিদ্র শ্রমিক ইছাককে বেধরকভাবে লাঠি পেটা করে আহত করে।
খবর পেয়ে বিজিবি টেকেরঘাট কোম্পানী সদরের কোম্পানী কমান্ডার নায়েব সুবেদার আব্দুস সাক্তার, ভিআইপি (গোয়েন্দা) সদস্য নায়েক সোহেল রানা ঘটনাস্থলে আসার পর ফের তাদের সামনেই দ্বিতীয় দফায় মারধর করে এবার তিন সহোদর শুক্কুর, সোহেল, রাসেল সংঘবদ্ধ হয়ে। এরপর তিন সহোদর ইছাককে জোর পুর্বক অপহরণ করে নিয়ে যাবার চেষ্টা চালায় প্রকাশ্যে শত শত লোকজনের সামনে।
বিজিবি তাদের বেপরোয়াপণা থেকে উদ্যার করে বিজিবি কোম্পানী সদরের ভেতর আহত শ্রমিককে নিয়ে যাবার পর তৃতীয় দফায় আবারো কোম্পানী সদরের প্রবেশ দ্বারের সড়কে তিন সহোদর অবস্থান নিয়ে ইছাককে বিজিবি কোম্পানী সদর থেকে বের হওয়া মাত্র পুন:রায় মারপিট করার হুমকি প্রদর্শন করে বীরদর্পে চলে যায়।
অভিযোগ রয়েছে গত কয়েকবছর ধরে পিতা জাহের আলীর প্রভাবে শুক্কুর, সোহেল রাসেল তিন সহোদর নাম সর্বস্ব একডি ডিপো নিয়ে কোন রকম এলসি ছাড়াই শুল্ক ফা^কি দিয়ে সীমান্তের লাকমা, টেকেরঘাট, বুরুঙ্গাছড়া রজনীলাইন সীমান্ত রুট ব্যবহার করে হতদরিদ্র শ্রমিকদের ব্যবহার করে দিবারাত্রী ভারতীয় কয়লা ও চুনাপাথর নিয়ে এসে ভুয়া চালান পত্রের মাধ্যমে চোরাচালান বাণিজ্যের প্রসার ঘটিয়েছে।
গত কয়েকছবর ধরেই ক্ষণবিরতি দিয়ে সীমান্তের টেকেরঘাট বিজিবির দায়িত্বরত সদস্যরা শুক্কুর চক্রের ডিপোতে থেকে বার বার চোরাচালানের মাধ্যমে নিয়ে আসা মজুদকৃত কয়লা,চুনাপাথর পিতার প্রভাবে মালিকবিহীন অবস্থায় জব্দ করার কারনে এ চোরাচালান চক্রের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা না নেয়ায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
ইছাক আরো জানান, যতবার শুক্কুর চক্রের ডিপো ও তাদের হেফাজত থেকে চোরাচালানের কয়লা, চুনাপাথর জব্দ করেছে বিজিবি ততবারই আমাকে পরিবহন কাজে বিজিবিকে সহযোগিতা না করার জন্য হুমকি দিয়ে আসছিলো এ চক্র। ইতিপুর্বে এ চক্র চোরাচালারে সংবাদ প্রকাশের জের ধরে একটি জাতীয় দৈনিকের সংবাদকর্মী সাবজল হোসাইনকে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি ও হুমকি ধামকি প্রদান করে।
রবিবার রাতে উপজেলার বড়ছড়া সীমান্ত গ্রামের জাহের আলীর নিকট তিন ছেলে কতৃক হতদরিদ্র শ্রমিকে মারপিট ও চোরাচালানের কয়লা বিজিবি কর্তৃক জব্দ করার ঘটনা সম্পর্কে জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ইছাকের সাথে আমার ছেলেরা যে ঘটনা ঘটিয়েছে তা মিমাংসা করার চেষ্টা চলছে। শনিবার রাতে তার ছেলে শুক্কুরের ডিপো থেকে চোরাচালানের কয়লা বিজিবি কর্তৃক জব্দের বিষয়টিও তিনি স্বীকার করে গণমাধ্যমকে বলেন, আর বাকী জীবনে শুনবেন না ভাই, আমার ছেলেরা ভারতীয় কয়লা চুনাপাথর চোরাচালানের ব্যবসার সাথে জড়িত রয়েছে। এ সংক্রান্ত সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশ না করার জন্যও বারবার গণমাধ্যমকর্মীদের অনুরোধ করেন জাহের আলী।
রবিবার সন্ধায় ২৮-বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের তাহিরপুরের টেকেরঘাট কোম্পানী সদরের কোম্পানী কমান্ডার নায়েব সুবেদার আব্দুস সাক্তারের নিকট সরজমিনে গিয়ে গণমাধ্যমকর্মীরা এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি শনিবার রাতে শুক্কুরের হেফাজতে তাদের ডিপো থেকে চোরাচালানের মাধ্যমে আনা ১৫শ কেজি ভারতীয় কয়লা জব্দ করার বিষয়টি স্বীকার করে গণমাধ্যমকে বলেন, রবিবার বিকেলে শ্রমিক ইছাকের উপর শুক্কুর তার অপর ভাইয়েরা যে মারধরের ঘটনা ঘটিয়েছে তা বিজিবির দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষকে জানানোর বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।